সুতো

সাড়ে ছটা বাজতে না বাজতেই কলিং বেল টা বেজে ওঠে প্রত্যেক দিন। মা টেনে হিঁচড়ে মুখে জল দিয়ে বসিয়ে দেয় পড়তে। হ্যাঁ, যিনি এতো সকাল সকাল হাজির , উনি আসলে মেঘের ইংরেজি মাস্টারমশাই, অভিষেক মান্না। বছর ৬০ এর ভদ্রলোক, ছিপছিপে চেহারা, কর্কশ গলা, মাটির মানুষ। মেঘের উপর কেমন যেন একটা দুর্বলতা আছে মান্না স্যারের। আজ ছয় বছর ধরে উনি প্রতিটা সকালে মেঘের ঘুম ভাঙার সঙ্গী।

পড়ার মাঝে গান গল্প আড্ডা সব একসাথেই চলতো। একসময়ের ভালো গাইয়ে ছিলেন মান্না বাবু। টনসিল এর অপারেশন হওয়ার পর, গলার আওয়াজটা নষ্ট হয়ে গেলেও রবী ঠাকুরে ভালোবাসা কিছু মাত্র লোপ পাইনি। আর একটা দুর্বলতা ছিল ওনার, লাল চা, পড়া শুরুর আগে ও শেষের আগে দুকাপ বাঁধাধরা। বেশ মজার সময় কাটলেও ভোরবেলা জোর করে ঘুম ভাঙাতে মেঘের বড্ডো আপত্তি। ‘আর কয়েকটা দিন তারপর মুক্তি’, মেঘ মনে ভাবল। ক্লাস ইলেভেন থেকে আর উনি আসবেন না।

ঐ দিন টিউশন এর শেষ দিন ছিল। পড়া শেষে গান গাইলো দুজন মিলে ‘তুমি কোন কাননের ফুল/কোন গগনের তারা/তোমায় কোথায় দেখেছি’। মাধ্যমিক এর রেজাল্ট সাথে এক প্লেট মিষ্টি, আম আর লাল চা। মনে মনে বেশ মজা পাচ্ছিলো মেঘ। কাল থেকে আর এই বিরক্তি কর স্যার টা কে দেখতে হবেনা।

মান্না বাবু বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই মনের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো মেঘের। কেমন যেন একটা অভ্যাস এ আটকে পড়েছে ওরা দুজন।সকালে উঠে স্যার আর কখনো আসবেন না, এই ব্যাপার টা এখনই ওকে স্বস্তি দিচ্ছিলো আর এখনই কেমন যেন মনে কেমন করা ঘোলাটে মেঘে ভোরে দিলো। স্নেহ ভরা আলিঙ্গন পেয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারলোনা ওরা দুজনেই।

সব সম্পর্কের মধ্যেখানের সুতোটা দেখা না গেলেও, ওটা আছে ,ওটা থাকে।

-সুপর্ণা ঘোষ (২০ অগাস্ট ২০১৭)

Megh Bristi

Megh Bristi

“মেঘ বৃষ্টি” আসলে আমার ডাইরির পাতা। কিছুটা কল্পনা, কিছুটা ছেলেমানুষি, কিছুটা অভিমান আর অনেকটাই স্মৃতি। ছোটবেলা থেকেই লিখতে ভালো লাগতো, ভাবতে ভালো লাগতো। ডাইরির পাতায় কত আঁকিবুঁকি, কত কাটাকুটি, কত দুষ্টুমি আছে। যতটা সম্ভব “মেঘ বৃষ্টি” তে তুলে ধরলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *