পর্ব ১
কোলকাতা থেকে মাত্র ২০০ কিমি দূরত্বে অবস্থিত ইতিহাসে ঠাঁসা নবাবের শহর মুর্শিদাবাদ। মুর্শিদাবাদ আসলে জেলার নাম, এবং সদর শহর হল বহরমপুর। সাজানো গোছানো এই শহরে কেটেছে আমার জন্ম থেকে বড় হয়ে ওঠার বেশ খানিকটা সময়। শীতের মর্সুমে বাঙ্গালীর মন হুট করে কেমন যেন বেদুইন হয়ে ওঠে। আর উইক্যান্ড বা বড়দিনের ছুটিতে এমন হাতের কাছে এক গুচ্ছ ইতিহাস, স্নিগ্ধ গ্রাম্য পরিবেশ, নলেন গুড়ের মন মাতানো গন্ধ সাথে একরাশ সুন্দর সুন্দর ছবি পাওয়া গেলে বছরের শেষ বা শুরু দুই-ই জমে ক্ষীর।
মুর্শিদকুলি খাঁ থেকে শুরু করে নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা পর্যন্ত বাংলার নবাবদের স্মৃতি যেখানে জড়িয়ে আছে, তাঁদের ব্যবহৃত সরঞ্জাম আর জীবনযাপনের খুঁটিনাটি যেখানে ছড়িয়ে আছে – সেই মুর্শিদাবাদ । নবাব পরবর্তী যুগের হাজারদুয়ারি যেখানে আছে – সেই মুর্শিদাবাদ । ইতিহাস যেখানে জীবন্ত হয়ে মানুষের সঙ্গে সঙ্গে ছায়ার মতো চলতে থাকে – সেই মুর্শিদাবাদ ।মুর্শিদাবাদের একদম মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে প্রাণোচ্ছল ভাগীরথী নদী, যা মুর্শিদাবাদকে ভাগ করেছে দুই ভাগে। রেল পথে তাই বহরমপুর পৌঁছানোর জন্য রয়েছে দুটি রেলস্টেশন। একটি খাগড়া ঘাট স্টেশন আর অপরটি বহরমপুর কোর্ট রোড। এছারাউ পর্যটক দের কাছে ভীষণ ভাবে পরিচিত ষ্টেশন মুর্শিদাবাদ। প্রধান পর্যটন কেন্দ্র গুলি এই মুর্শিদাবাদ ষ্টেশন থেকে বেশ কাছে।কিন্তু যদি আপনার হাতে সময় আছে আর আপনি শহরের বুকে থাকায় পছন্দ করেন তবে আসতে হবে বহরমপুরে। বহরমপুর থেকে পর্যটন কেন্দ্র গুলির দুরত্ব খুব বেশী নয়। অটো বা প্রায়ভেট কার এ সময় লাগে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। বাংলার নবাব মুর্শিদ কুলি খানের নাম অনুসারে এই শহর এবং জেলার নামকরণ হয়েছে মুর্শিদাবাদ। এটি নবাবী আমলে বাংলার (বর্তমানে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ) প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল।এই জেলার উত্তরে মালদহ জেলা ও বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, উত্তর-পূর্বে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা, দক্ষিণে নদীয়া জেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে পূর্ব বর্ধমান জেলা, পশ্চিমে বীরভূম জেলা এবং উত্তর-পশ্চিমে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় জেলা অবস্থিত ৷
পৌছবেন কিভাবেঃ বাস অথবা রেল পথ দুটিই বেশ জনপ্রিয় মুর্শিদাবাদ পৌঁছানোর জন্য।
শিয়ালদা ষ্টেশন থেকে হাজারদুয়ারি, শিয়ালদা লালগোলা প্যাসেঞ্জার, কোলকাতা বহরমপুর কোর্ট এক্সপ্রেস, ভাগীরথী এক্সপ্রেস। এছাড়াও বেশ কিছু লোকাল ট্রেনও আছে।
ট্রেনের সময় ও অনান্য তথ্য জানার জন্য যেতে পারেন এই লিংকে। https://www.trainspnrstatus.com/trains/sealdah-murshidabad
এছাড়াও আসতে পারেন সড়ক পথে বাসে বা গাড়িতে।
পর্ব ২
মুর্শিদাবাদ এলে প্রধানত ঘুরবেন কোথায়,
মুর্শিদাবাদ স্টেশনটা খুব সুন্দর – হাজারদুয়ারীর আদলে তৈরি করা । স্টেশন থেকে বেড়িয়ে পেয়ে যাবেন টাঙ্গা । এই টাঙ্গায় চড়াটা আমার মনে হয় সবার কাছেই বেশ উপভোগ্য আর এই সুযোগ খুব বেশি জায়গায় পাওয়াও যায় না ।
পিচের রাস্তার ওপর দিয়ে ঘোড়ার ‘খুট্ খুট্’ শব্দ তুলে এগিয়ে চলা, সবমিলিয়ে ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগে । অসংখ্য হোটেল পেয়ে যাবেন হাজারদুয়ারির একেবারে সামনে গঙ্গার পাশে, একি হোটেলে পেয়ে যাবেন খাওয়ার দাবার , তাই হোটেলে পৌঁছনোর পথে টুক্ করে একবার হাজারদুয়ারি দেখা হয়ে যায় । টাঙ্গাওয়ালারা নেবে মাথাপিছু ১০ টাকা করে ।
এখানে যেকোনো জায়গাতেই গাইড্দের পাওয়া যায় , আমার মতে সবজায়গাতেই একজনকে নিয়ে নেওয়া ভালো । কারণ মুর্শিদাবাদ প্রধানত ঐতিহাসিক জায়গা, তাই দেখার সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসটা একটু জেনে নিলে ভালোই লাগবে । আমাদের গাইড একটা খুব সুন্দর কথা বলেছিলেন – “জানলে ইতিহাস আর না জানলে মাটির দেওয়াল !”
১) হাজারদুয়ারি প্যালেস
মুর্শিদাবাদ ঘোরার কথা শুনলে সবার প্রথমে মাথায় আসে হাজারদুয়ারী’র কথা।
ভাগীরথী নদীর তীরে প্রায় ৪১ একর এলাকা জুড়ে রয়েছে এই বিশাল প্রাসাদ। মুর্শিদাবাদের এমনকি সমগ্র বাংলার একটি অনবদ্য সৌন্দর্য। এই প্রাসাদে সব মিলিয়ে মোট ১০০০টি দরজা সুসজ্জিতভাবে থাকার কারনে এর নাম ‘হাজারদুয়ারী’। তবে বাস্তবে এর মোট আসল দরজা’র সংখ্যা ৯০০টি, বাকি ১০০টি শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করবার জন্য নির্মিত । এই দরজা নিয়ে এছাড়াও অন্য আরও কিছু ধারণার হদিশ মেলে।প্রাসাদ’টির পরিধিতে একইসাথে অবস্থিত নিজামত ইমামবারা, ওয়াসিফ মঞ্জিল, বাচ্চাওয়ালি তোপ এবং মুর্শিদাবাদ ক্লক টাওয়ার।
তৎকালীন সময়ে প্রাসাদটি একটি রাজকীয় প্রাসাদ ছিল। বর্তমানে আসল প্রাসাদ’টি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়ে ভাগীরথী’র জলে তলিয়ে যাওয়াই একই অনুকরণে নতুন করে প্রাসাদ’টি তৈরি করে একটি যাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। । হাজারদুয়ারির সঙ্গে কিন্তু সিরাজ-উদ্-দৌলার কোনও সম্পর্ক নেই । সিরাজের মৃত্যুর অনেক পরে হাজারদুয়ারি তৈরি করা হয় । হাজারদুয়ারির সঙ্গে কলকাতার টাউনহলের আকৃতির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায় – কারণ দু’টোই একই কোম্পানীর ডিজাইন করা । এই নকল দরজাগুলো চট্ করে দেখে বোঝা যায় না, তবে কাছে গিয়ে নিরিক্ষণ করলে ধরতে পারা যায় । জানলাম ইঁট-চুন-সুরকির সঙ্গে খয়ের জল, আখের গুড়, ডিমের কুসুম ইত্যাদি ব্যবহার করে এই দরজা তৈরি হয়েছিল । হাজারদুয়ারির ভেতরে আরেকটা আকর্ষণীয় জিনিস হল সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়ার উপহার দেওয়া ১০১ বাতির একটা সুদৃশ্য ঝাড়লন্ঠন । এছাড়া হাজারদুয়ারির ভেতরে রয়েছে নবাব আর ইংরেজদের ব্যবহৃত বহু অস্ত্রসস্ত্র, জিনিসপত্র, বাসনপত্র, আসবাবপত্র, শুধু পত্র, বহু বিখ্যাত শিল্পীদের হাতে আঁকা ছবি, বিলিয়ার্ড বোর্ড, পলাশীর যুদ্ধে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ইত্যাদি । হাজারদুয়ারি ভালোভাবে দেখতে গেলে কমপক্ষে দু-আড়াইঘন্টা সময় নিয়ে যাওয়া উচিৎ । হাজারদুয়ারি শুক্রবার বন্ধ থাকে । হাজারদুয়ারির ঠিক মুখোমখি রয়েছে ইমামবাড়া – এটা বাংলার সবচেয়ে বড়ো ইমামবাড়া । এটা বছরের মধ্যে শুধুমাত্র মহরমের সময়ে ১০ দিন খোলা থাকে, বাকি সারাবছর বন্ধ থাকে ।
২) মোতিঝিল
মোতিঝিল তৈরি করান নবাব আলিবর্দীর জামাই । এখানে একটা অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ আছে যেখানে একসময়ে মোতি বা মুক্তোর চাষ হতো । এখানে একটা মসজিদ আছে । মোতিঝিলের মসজিদের পাশে একটা ঘর আছে যার কোনও দরজা বা জানালা নেই । চারদিকে দেওয়াল আর ছাদটাও ঢাকা । কথিত আছে সিরাজ এক ফৈজীর ওপর রেগে গিয়ে তাঁকে মাঝখানে রেখে এই ঘর তৈরি করান । অনেকে মনে করতেন এইঘরে অনেক মণিমুক্তোও আছে । কিন্তু এর আশ্চর্য শক্ত ইঁটের গাঁথনি কেউ কোনওভাবে ভাঙতে পারেনি । পরবর্তীকালে কোনও একজন সাহেব এইঘরের দেওয়াল কামানের গোলা দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন এবং সেইদিন রাতেই সাহেব মারা যান । তারপর থেকে এইঘরের দেওয়াল ভাঙার চেষ্টা আর কেউ কখনও করেনি । দেওয়ালে কামানের আঘাতের চিহ্ন আজও স্পষ্ট দেখা যায় । বর্তমানে মতিঝিল এ একটি বেশ সুন্দর মনোরম বাগান তৈরি করা হয়েছে, যা পর্যটক দের বেশ আকর্ষণের জায়গা।
৩) কাটরা মসজিদ
মসজিদের পিছন দিয়ে দিক ঢুকতে হয় কারণ সেখান দিয়েই প্রধান রাস্তা চলে গেছে । কাটরা মসজিদে উপাসনা ছাড়াও ছাত্রাবাস ছিল, যেখানে একসঙ্গে বহু আবাসিক একসঙ্গে থেকে পড়াশোনা করতে পারত ।
মসজিদের সামনের দিকে একটা বিশাল চাতাল আছে যেখানে একসময়ে অনেক মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তেন । কাটরা মসজিদের সবচেয়ে আগ্রহজনক বিষয় হল এর প্রবেশসিঁড়ির নিচে রয়েছে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ-র সমাধি । নবাবের ইচ্ছানুযায়ী মৃত্যুর পরে তাঁকে এখানে কবর দেওয়া হয় ।
নবাব বলেছিলেন “মসজিদমে প্রবেশ করনে কে লিয়ে লোগ যব মেরে উপর সে গুজরেঙ্গে, তব যাকে মেরে পাপ ধোনে লাগেঙ্গে” । কাটরা মসজিদের প্রধান উপাসনা গৃহের ছাদে পাঁচটা গম্বুজ ছিল, যার তিনটে ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়েছে । এখন এর ছাদটা পুরোপুরি অনাবৃত । ভূমিকম্প কাটরা মসজিদের আরও কিছু ক্ষতিও করেছে । মসজিদের চারকোণে চারটে মিনার ছিল যাদের মধ্যে দু’টো ভূমিকম্পে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে ।
৪) জগৎ শেঠের বাড়ি
জগৎ শেঠের বাড়িতে প্রবেশমূল্য মাথাপিছু ১০ টাকা । জগৎ শেঠ হলেন একজন যিনি সিরাজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন । ইনি একজন ধনকুবের ছিলেন – সেটা ওনার বাড়ির নানারকম সরঞ্জাম থেকেই বোঝা যায় । এখানে মাটির নিচে একটা মিউজিয়াম আছে । এই মিউজিয়ামে বাংলার বিখ্যাত মসলিন্ দেখতে পাওয়া যায় । এই মসলিন নাকি এতই নরম যে একে আংটির ভেতর দিয়ে চালান করা যায় । বাড়ির সঙ্গে একটা মন্দির আছে ।
৫) কাঠগোলা বাগান
মুর্শিদাবাদ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, এটি মুলত মুর্শিদাবাদের নাম করা ব্যবসায়ী জগৎ শেঠ এর বাগানবাড়ি। এখানেই একইসাথে চলতো জগত শেঠ এর কাঠের ব্যাবসা, তাই এর নাম ‘কাঠগোলা বাগান’। তৎকালীন বাংলার অভিজাতবর্গ ও বিদেশী’দের সবসময় আনাগোণা চলতো এখানে।
এই বিশাল প্রাসাদ’টিতে এমন কিছু বিস্ময়কর নিদর্শন দেখা যাবে যা যেকোনও সাধারণ মানুষের মনে বিস্ময়ের উদ্রেগ করবে। প্রাসাদ, অবিরাম উদ্যান, পুকুর, আদিনাথকে উৎসর্গ করা একটি মন্দিরে এবং মাইকেলহানজেলোর একটি মূর্তি ছাড়াও এখানে আছে জগত শেঠ এর বাড়ি থেকে বাগানবাড়ি পর্যন্ত একটি বিশাল সুরঙ্গপথের দ্বার, যা বর্তমানে ভাগিরথীর জলে ভরে সম্পূর্ণ ব্যাবহারের অযোগ্য। শোনা যায় এখনেই প্রথম নিজস্ব চিড়িয়াখানা তৈরি করেছিলেন।
৬)খোসবাগে সিরাজ-উদ-দৌলার সমাধি
এখানে সিরাজ ছাড়াও তাঁর পত্নী লুৎফান্নিসা, দাদু আলিবর্দী খাঁ এবং তাঁদের পরিবারের অনেকের সমাধি রয়েছে । তবে কোন্টা কার সমাধি নিজে থেকে জানার কোনও উপায় নেই কারণ সমাধির ওপরে আরবিতে লেখা । শুধুমাত্র সিরাজ-এর সমাধিটাই চিনতে পারা যায় এর কেন্দ্রীয় অবস্থান দেখে । সমাধি ছাড়াও এখানে রয়েছে খোসবাগ মস্জিদ যেটা নবাব আলিবর্দী খাঁ তৈরি করিয়েছিলেন । জায়গাটা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় ।
৭) রানীভবানীর মন্দির
এরপর আমাদের দ্বিতীয় গন্তব্য – রানীভবানীর মন্দির । রানীভবানী ছিলেন অনেকটা দক্ষিণেশ্বরের রানী রাসমণির মতো । তিনি এখানে চারটি মুখোমুখি মন্দির তৈরি করান । এই মন্দিরের গায়ে পুরাণের বহুঘটনার ছবি খোদিত আছে । বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগল এই সৌন্দর্য্য দেখতে । এই মন্দিরগুলো থেকে সামান্য কিছু দূরে রানীভবানীর মন্দিরও আছে ।
৮) জগদ্বন্ধু ধাম
এই জায়গার কোনও ঐতিহাসিক গুরুত্ব নেই, এখানে জগদ্বন্ধুর জন্ম হয়েছিল । এখানকার মন্দিরটা দেখতে খুব সুন্দর – যেটা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে সেটা হল মন্দিরের গায়ে-মাথায় খোল আর কর্তালের ছবি আর মডেল । মন্দিরের লাগোয়া নাটমন্দিরটা বেশ বড় আর পরিষ্কার ।
৯) কিরীটেশ্বরী মন্দির
জগদ্বন্ধুধামের পরে আমাদের কিরীটেশ্বরী মন্দির ।
পুরাণ মতে এখানে সতীর কিরীট পড়েছিল – সেই থেকেই নাম কিরীটেশ্বরী মন্দির । যদিও মন্দির হিসেবে খুব ঘ্যাম কিছু না আর সেইজন্যই পুজো-টুজো দেওয়ার কোনও ব্যাপার নেই । আমরা কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে এগিয়ে চললাম আমাদের আজকের পঞ্চম তথা শেষ গন্তব্যের দিকে ।
১০) নিমকহারাম দেওড়ী
এরপর পড়ল নিমকহারাম দেওড়ী ।
এটা আসলে বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের প্রাসাদ । এখানে মীরজাফরের বংশধররা এখনও বাস করেন । আগে একসময়ে এটা একটা দেখার জায়গা ছিল । পরবর্তীকালে বাসিন্দাদের আপত্তির কারণে এখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয় ।
১১)আজিমুন্নেসার সমাধি
পথে শেষ দেখার জায়গা পড়ল আজিমুন্নেসার সমাধি । ইনি মুর্শিদকুলি খাঁ-র কন্যা আর এনাকেও তাঁর বাবার মতো মসজিদের সিঁড়ির নিচে সমাধিস্থ করা হয় ।
বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে মুর্শিদাবাদ একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করে । আর এই ইতিহাসই
মুর্শিদাবাদের আকর্ষণ । ইতিহাস এখানে যেন সত্যিই কথা বলে । মুর্শিদাবাদ ভ্রমণ ভালো লাগার জন্য ইতিহাসের ছাত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই, কিন্তু ইতিহাসকে সম্মান করার প্রয়োজন আছে । মুর্শিদাবাদে প্রাকৃতিক কোনও আকর্ষণ নেই – এখানকার আকর্ষণের সবকিছুই হয় মানুষের তৈরি না হয় মানুষের ধ্বংস । মানুষের চরিত্রের যে ভালো বা খারাপ দিকগুলো থাকে, সেগুলোই যেন বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা আর গল্পের মধ্যে দিয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদে । মুর্শিদকুলি খাঁ, নবাব আলিবর্দী, সিরাজ-উদ্-দৌলা বা মীরজাফর – এরা কি নিজেদের মতো করে আমাদের চারপাশে আজও বেঁচে নেই ? সেটা উপলব্ধি করার জন্য আগে ভালোভাবে জানার দরকার এরা কে কিরকম লোক ছিল । আর সে’জন্য – জীবনে অন্ততঃ একবার – মুর্শিদাবাদ যাওয়া উচিৎ !