দোল আমি এবং স্মৃতি

সাল টা ২০১০, মাধ্যমিক এর শেষ পরীক্ষা অঙ্ক, পড়লো ঠিক দোলের আগে ,দোলের জন্য ছুটি পেলাম পাঁচ দিন মত।জীবনের প্রথম বোর্ড এক্সাম তাই প্ৰথম থেকেই ঠিক ছিল এবারের হলি তে আমার আর হ্যাপি হওয়া হবেনা।রং খেলার ইচ্ছে আমার ষোল আনা,কিন্তু ওই যে মা আছে এবারের দ্বার রক্ষী।মুখ গোমড়া করে বই পত্র ঘাটছি, ঘরের বাইরে শুনতে পাচ্ছি হই হুল্লোড় ,পারার সব লোক যেন ষড়যন্ত্র করে আজ ঠিক আমার ঘরের সামনে এসে রং মেখে ভুত হবে প্রতিজ্ঞা করেছে। আমার পরীক্ষা ,খেলা নিষেধ ,তাই বাবাও বেরোলনা। আমার জন্য সেবার বাবা ও আনন্দ ত্যাগ করলো।রান্না ঘরে তোড়জোড় চললো ভালোমন্দ রান্নার। আর আমার মনে তখন ঝড়, জীবনের প্রথম প্রেমের বয়স তখন সবে ২১ দিন, মন তো সারাক্ষন তার বুক পকেটেই থাকে।

ছোট্ট একটা ফোন ছিল স্যামসাং গুরু হান্ড্রেড।তাতেই কথা হতো লুকোচুরি করে , বই এর ভাঁজে লুকোনো ফোন থেকে তখন বইতো এক রাস ফাগুন রঙের এস-এম-এস এর ঝড়। শুনলাম আমায় রং লাগাতে না পারলে সে ও নাকি খেলবেনা। গদগদ আমি “উফফ কত ভালোবাসে”ভেবে খানিক চোখ ও মুছলাম। বেলা যখন ১২টা বইয়ের স্তুপ থেকে উঠে বাইরের রাস্তা ঘেঁষা বারান্দায়তে দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় হুরমুর করে লাল নীল সবুজ আবীরে মাথা গেল ভোরে, পাপ্পু দাদা,বুনু ,মৌ জেম্মা জেঠু বাড়িতে আমার ১৬ জন লোক , ছোট খাটো পাড়া বলা চলে। ব্যাস! আমাকে আর পায় কে। একবার রং লাগলো মানে দোল খেলার এক অদৃশ্য লাইসেসন্স কপালে সেটে চললুম কোদাকুদি করতে। তারপর টানা দুদিনি ভীষণ রকম খেলা চললো।মা বাবা নিশ্চিত আমি অঙ্কে ডুবব।তা যাইহোক অঙ্কে আমি ডুবিনি ,কিন্তু পরদিন স্কুল এ খালি আমি একাই ছিলাম লাল রং এর পরীক্ষার্থী। আজ ও দোল , বাড়ি থেকে দূরে ,চার পাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম পরিচিত একটা মুখ ও নেই। রং নেই ফাগুন নেই ।বোকা আকাশ সাদা হয়েই আছে।আমারও প্রথম রং হীন হোলি ,তাই স্মৃতির রং এ খেলছি বিছানায় শুয়ে শুয়েই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *