রাধা-কৃষ্ণের শেষ সাক্ষাতে মোহনবাঁশির স্বর্গীয় সুরে মৃত্যুবরণ রাধিকার

Painting by me (Suparna Ghosh)
Painting by me (Suparna Ghosh)
Painting by me (Suparna Ghosh)

-সুপর্ণা ঘোষ (Feb 2018)

রাধা-কৃষ্ণের শেষ সাক্ষাতে মোহনবাঁশির স্বর্গীয় সুরে মৃত্যুবরণ রাধিকার‚ বাঁশি ভেঙে ফেলে দিলেন শ্রীকৃষ্ণ

কৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে আর কোনওদিন রাধার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল ? বেশিরভাগ প্রামাণ্য পুঁথি বলবে‚ না‚ আর কোনওদিনও শ্রীরাধিকার মুখোমুখি হননি তাঁর প্রাণসখা | এক বারের জন্যেও বৃন্দাবনে পা পড়েনি দ্বারকার রাজা কৃষ্ণের | এ বার তাহলে শুনুন এক প্রচলিত লোককথা | যেখানে বলে‚ রাজা হওয়ার পরেও প্রেয়সী রাধিকার মুখোমুখি হয়েছিলেন তাঁর কানাই |

শক্তির প্রতীক‚ দেবী লক্ষ্মীর অংশ হিসেবে রাধার উল্লেখ আছে ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণ‚ রাধিকোপনিষদ‚ স্কন্দ পুরাণে | তবে শ্রীরাধা কৃষ্ণের মতো গুরুত্ব পেলেন দেশে বৈষ্ণব সাহিত্যের জোয়ার আসার পরে | বল্লভ‚ গৌড়ীয় বা নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের বৈষ্ণবদের কাছে রাধিকা ছাড়া শ্রীকৃষ্ণের অস্তিত্ব অর্থহীন | বৈষ্ণবদের মধ্যে প্রচলিত আছে এক কাহিনি | রাধা-কৃষ্ণের শেষ সাক্ষাতে রাধিকার মৃত্যুবরণের কথা |

বলরাম-কৃষ্ণকে নিয়ে যেতে বৃন্দাবনে এল কংসের রথ | রাধার কাছ থেকে বিদায় নিতে রেপাল্লি গ্রামে গেলেন শ্রীকৃষ্ণ | দুজনের দেখা হল | কিন্তু সে সাক্ষাৎ নির্বাক | কয়েক ক্ষণ থেকে চিরদিনের মতো রাধার কাছ থেকে চলে গেলেন তাঁর সখা | শুধু রাধিকাই নন | কৃষ্ণ ছেড়ে চলে গেলেন তাঁর আবাল্যের বৃন্দাবন‚ সব গোপ বালক‚ গোপিনী‚ সবথেকে বড় কথা তাঁর শৈশব ও কৈশোরকে |

একদিকে কংস-শিশুপাল বধের পরে কৃষ্ণ তখন রাজা | রাজধানী মথুরা থেকে চলে গেছে দ্বারকায় | অন্যদিকে বৃন্দাবনে রাধার ধ্যানজ্ঞান শুধুই কৃষ্ণ | প্রতি মুহূর্তেই তাঁর কথা ভেবে চলেন কলঙ্কিনী রাধা | যা নিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছে রাধার বারমাস্যা | মনে কৃষ্ণকে নিয়ে যন্ত্রের মতো জটিলা-কুটিলার সংসারে থাকেন রাধা | একদিন শেষ হয় তাঁর সংসার ধর্ম | ততদিনে রাধা বৃদ্ধ‚ দুর্বল | সংসারের সব দায়িত্ব পালন সমাপ্ত করে রাধা বৃন্দাবন ছেড়ে চলে গেলেন | একবার কৃষ্ণকে চোখের দেখা দেখবেন বলে |

অবশেষে দ্বারকায় গিয়ে কৃষ্ণের মুখোমুখি হন রাধা | তখন কৃষ্ণের পরনে রাজবেশ | আর রাধা ক্ষীণকায়া | কৃচ্ছ্রসাধনে তাঁর দেহ ভেঙে পড়েছে | কৃষ্ণর কাছে থাকবেন বলে দ্বারকার প্রাসাদে থেকে গেলেন রাধা | এক দাসীর বেশে | একথা রাধাকৃষ্ণ ছাড়া আর কেউ জানলেন না | সারা দিনমানে দূর থেকে তিনি দেখেন কৃষ্ণকে | কিন্তু রাধা উপলব্ধি করলেন‚ তাঁর এই আচরণ ঠিক নয় | কৃষ্ণের এই সান্নিধ্য তাঁর ভাল লাগছে না | আপাত ভাবে দূরত্ব কমেছে ঠিকই | কিন্তু মনসিক দূরত্ব অনেক বেড়েছে | এর থেকে মানসিক নৈকট্য অনেক বেশি কাছের ও সুখের | কারণ‚ তিনি আর কৃষ্ণ তো একই সত্তা | কৃষ্ণকে পাওয়ার জন্য তাঁকে দেখা‚ তাঁর কাছে থাকার কোনও দরকার নেই | কারণ কৃষ্ণের আসন পাতা আছে তাঁর মনে |

সবার অলক্ষ্যে নিভৃতে কৃষ্ণের প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন রাধা | কোথায় যাবেন‚ কিছু জানেন না | উদ্ভ্রান্তের মতো হাঁটতে হাঁটতে চৈতন্য হারিয়ে পড়ে গেলেন | রাধিকা না বললে কী হবে‚ কৃষ্ণ টের পেয়েছিলেন রাধার প্রস্থান | তাঁর দিব্য স্পর্শে জ্ঞান ফিরল রাধার |

কৃষ্ণ বললেন‚ রাধা যেন তাঁর কাছে কিছু প্রার্থনা করেন | কোনওদিন রাধিকা কিছু কামনা করেননি তাঁর কাছে | রাধিকা ঈশারায় জানালেন‚ একবার বাঁশি শুনবেন |  মোহনবংশীধারী তাঁর পরম ভক্তের একমাত্র প্রার্থনা পূর্ণ করলেন | বাঁশির স্বর্গীয় সুরে ভরে গেল চারদিক | এই সুর আগে কোনওদিনও বাজাননি তিনি | সুরের আবেশে চোখ বুজলেন রাধিকা | মর্ত্যলোকে শেষ হল তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য | তাঁর ক্ষীণ দেহ বিলীন হয়ে গেল কৃষ্ণের সঙ্গে | তাঁদের যে সত্তা এক | ঈশ্বর এবং সাধিকার মিলনে পূর্ণ হল বৃত্ত | শ্রেষ্ঠ ভক্তের বিলীয়মান রূপ দেখে বাঁশি ভেঙে ফেলে দিলেন কৃষ্ণ | বৃন্দাবনের কানু থেকে আবার দ্বারকার রাজা হয়ে ফিরে গেলেন প্রাসাদে |- banglalive.com

Megh Bristi

Megh Bristi

“মেঘ বৃষ্টি” আসলে আমার ডাইরির পাতা। কিছুটা কল্পনা, কিছুটা ছেলেমানুষি, কিছুটা অভিমান আর অনেকটাই স্মৃতি। ছোটবেলা থেকেই লিখতে ভালো লাগতো, ভাবতে ভালো লাগতো। ডাইরির পাতায় কত আঁকিবুঁকি, কত কাটাকুটি, কত দুষ্টুমি আছে। যতটা সম্ভব “মেঘ বৃষ্টি” তে তুলে ধরলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *